নিজস্ব প্রতিবেদন: সঙ্গীতা চৌধুরী, বহরমপুর:- আমাদের সকল দুর্গতির কারণ কী জানেন? কেন আমরা জন্ম-জন্মান্তর ধরে দুর্গতি ভোগ করি? কেন আমরা মুক্তি লাভ করি না? আজন্ম যন্ত্রনা কষ্ট ভোগ করার পর অন্য কোন নীচ যোনি প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় দুঃখ কষ্ট ভোগ করি। কেন এমনটা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর কী আপনার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে? তাহলে আমার এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্যই লেখা। আমার এই প্রতিবেদনে আমি যে লেখাগুলো লিখছি সেগুলো নানারকম শাস্ত্র পুঁথি পড়ে লেখা। সেই ঘটনাই আজ আপনাদের বলবো।
আমাদের এই জন্ম-জন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সহজতম উপায় হচ্ছে-পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের চরণে আশ্রয় গ্রহণ করা। গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ তো বলেছেন-” তুমি যদি অন্তে একবার আমার স্মরণ করো তবে তুমি আমাকেই প্রাপ্ত হবে।”এখন আমরা ভাবতেই পারি যে এখন আমার অল্প বয়স ,এখন আমি মনমতো পাপ কাজ করে নিই। মরার আগে হরিনাম করব। এবং এমন ভাবনা ভেবেই বহু মানুষ তাদের জীবন অতিবাহিত করেন। কিন্তু বাস্তবে এই মানুষরা মুক্তিলাভ করেন না। অন্তিম কালে তাদের হরি স্মরণ হয় না। আসলে মায়া যে কত সুক্ষ্ম জিনিস তা আমরা কেউ উপলব্ধি করতে পারিনা। স্বামী রামসুখদাস মহারাজের সৎসঙ্গ থেকে উদ্ধৃত একটি প্রেরণাদায়ী শাস্ত্রের ঘটনার আজ উল্লেখ করব। যা থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা চাইলেই মৃত্যুর আগে হরিকে স্মরণ করে আমাদের পরবর্তী জন্ম কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি না। হরি স্মরণ করতে গেলে দীর্ঘকালের অভ্যাস দরকার।
একজন সাধু বাবা ছিলেন খুবই অনাসক্ত এবং ত্যাগী পুরুষ। তিনি টাকা-পয়সা স্পর্শ করতেন না। একান্তে বসে সাধন-ভজন করতেন। তার একটি ভক্ত ছিল যে সেই সাধুবাবার একমনে সেবা করতো। কোন একটি কারণে একবার সেই ভক্তকে সাধুবাবার থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে যেতে হল। যাওয়ার আগে তিনি সাধু বাবাকে বলে গেলেন _”বাবা। আমাকে যে একটু বাইরে যেতে হবে।” সাধু বাবা বললেন -“বাছা তুমি যাও কিছু ভেবোনা আমার খাওয়া-দাওয়ার ভাবনা তোমার অধীন নয়।তুমি যেতে পারো।”তবু ওই ভক্ত বলল-” মহারাজ কিছু টাকা আপনার সামনে ওই মাটিতে পুঁতে রেখে যাচ্ছি যদি দরকার হয় তাহলে কাউকে দিয়ে কিছু আনিয়ে নেবেন।”বাবাজির অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভক্ত টাকা মাটিতে পুঁতে রেখে গেল। এরমধ্যে একদিন সাধুবাবার খুব অসুখ করল। এবং তিনি মারা গেলেন। মরার পর তার ভূত যোনি লাভ হলো। রাত্রিবেলা লোকে ওখানে খড়মের খটখট আওয়াজ শুনতে পেত। এরপর ভক্ত ফিরে এসে জানলেন সাধু বাবা মারা গেছেন তার খুবই দুঃখ হলো। তিনি আরও শুনলেন যে” ওখানে রাত্রে খড়মের আওয়াজ হয় কোন ভূত-প্রেত হবে তবে কারো কোন ক্ষতি করে না।” সেই ভক্ত রাত্রে ওখানেই থাকলেন। সাধু কে উদ্দেশ্য করে প্রার্থনা করতে করতে তিনি দেখলেন সাধুবাবা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর বলছেন-“শোনো বাবা মরার সময় তোমার ওই টাকাগুলোর দিকে আমার মন চলে গিয়েছিল তাতে আমার এই দশা। এখন তুমি টাকাগুলো কোনো সৎ কাজে ব্যয় করে দাও তাহলে আমি মুক্তি পাই।”সাধু টাকাটা নিজে ব্যবহার করেননি কিন্তু টাকাটা আমার জন্য পড়ে আছে এই ভাবনাতেই তাঁর এই দশা প্রাপ্তি। এখন আপনি ভাবুন একজন নিরাসক্ত ঈশ্বর সাধক মৃত্যুকালে ঐ ভাবনার কারণে যার হরি স্মরণে ব্যাঘাত ঘটলো সেখানে আমি আপনি তো তুচ্ছ মানুষ। আমাদের সংসার আছে ঘর গেরস্থালি আছে বাবা-মা সন্তান আছে মৃত্যুকালে হরি স্মরণের জায়গায় আমাদের মনে হবে-ছোট নাতির সন্তানের মুখটা যদি দেখে যেতে পারতাম! এমনই মায়াবদ্ধ মন আমাদের। আর তার ফল স্বরূপ ছোট নাতির সন্তানের মুখ দেখে যেতেও পারব না আর সেই সন্তান আমাকে উদ্ধার ও করবে না কিন্তু আমাকেই অশেষ দুর্গতি ভোগ করতে হবে। হয়তো নীচস্থ কোন যোনি প্রাপ্ত হবো। ভূত প্রেত পিশাচ ও হতে পারি। তাই আমাদের দুর্গতির কারণ আমরাই। তাই বলবো কবে বয়স হবে সেই আশায় বসে না থেকে আজ থেকে একটু হরিনাম করুন। কারণ মনে রাখবেন মানুষের হাতে সব কিছু থাকলেও জন্ম আর মৃত্যুটা কিন্তু আমাদের হাতে নেই। কিন্তু এই জন্মের পুণ্য কর্মের ফলে আমরা অবশ্যই পরবর্তী জন্মে উন্নত যোনি প্রাপ্ত হবো অথবা পূণ্য অধিক হলে কৃষ্ণ চরণ ও পেয়ে যেতে পারি।হরে কৃষ্ণ। হরে কৃষ্ণ।