সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- একটানা দীর্ঘ সময় শাঁখ বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ডের দোরগোড়ায় এক বঙ্গ সন্তান। কিন্তু উপযুক্ত যোগাযোগ না থাকায় দোরগোড়ায় পৌঁছেও নিয়মের বেড়াজালে আটকে আছেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির হাড়িভাঙ্গা গ্রামের বছর কুড়ির অসীম মাজি। বর্তমানে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র অসীম একটানা এক ঘন্টারও বেশী সময় শাঁখ বাজাতে পারেন। সেকেণ্ডের হিসেবে যা ৪০২৮ সেকেণ্ড। ইতিমধ্যে বিহারের এক যুবকের এবিষয়ে রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছেন তিনি।
বাঁকুড়ার অসীম মাজির এই ‘জার্নি’টা খুব সহজ ছিলনা। অসংখ্যবার নানান বাধা এসেছে, হয়েছেন অপমানিত। তবুও অধ্যাবসায় ও মানসিক দৃঢ়তার জেরে বারবার নিজের তৈরী রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে চলেছেন। এই মুহূর্তে সে একটানা ১ ঘন্টা ৭ মিনিট ৮ সেকেণ্ড শাঁখ বাজাতে পারে। কয়েক মাস আগেই ‘লিমকা বুক অব ওয়ার্ল্ডে’ এবিষয়ে আবেদন করেছে সে। যদিও লিমকা কর্ত্তৃপক্ষের তরফে এখনো কোন সদূত্তর মেলেনি। কেমন ছিল শাঁখ বাজানো নিয়ে অসীম মাজির এই ‘জার্নি’টা? শুনে নেওয়া যাক্ তার মুখ থেকেই। কলকাতা ২৪×৭ ডটকমকে দেওয়া একান্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকারে সে জানিয়েছে, বাড়িতে কোন শাঁখ ছিল না। বয়স তখন ১১। দাদা সুষেন মাজি বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা বেড়াতে গিয়ে একটি শাঁখ কিনে আনেন। মা রোজ সন্ধ্যারতীর সময় সেই শাঁখ বাজাতেন। সেই বয়সে কোন কিছু না বুঝেই মনের আনন্দে মায়ের হাত থেকে সেই শাঁখ নিয়ে বাজাতে থাকে সে। এভাবেই পথ চলা শুরু। এখনো বাড়িতে থাকলে সে সন্ধ্যারতীর সময় শাঁখ বাজায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ অনুশীলনের জেরে বেড়েছে একটানা শাঁখ বাজানোর সময়সীমাও। একটা সময় এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় শঙ্খ ধ্বনী প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কার ছিল তার বাঁধা। সেখানেও জুটেছে অপমান। মামাবাড়িতে এইরকমই এক প্রতিযোগীতায় বিচারকরা অন্যায়ভাবে তাকে বের করে দেন দাবী করে সে বলে, ওদের মনে হয়েছিল আমি ‘চিটিং’ করছি। এভাবে দীর্ঘক্ষণ কেউ শাঁখ বাজাতে পারেনা। সেদিনই বাবা মায়ের পা ধরে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম একদিন ‘শাঁখ বাজিয়েই বিশ্বরেকর্ড করবো’। তার অকপট স্বীকারোক্তি। যে যাই বলুক, যতোই বাধা আসুক একান্নবর্ত্তী পরিবারে মানুষ হওয়া অসীমের এই কাজে বরাবর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাবা ভৈরব মাজি ও মা সুভদ্রা মাজি।